বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত পেশাদার ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ১৯৬৬ সালে কিছু উৎসাহী ইতিহাস অনুরাগীর সক্রিয় প্রচেষ্ঠায় এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। সমিতির মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল ইতিহাস পাঠ ও আলোচনা এবং ইতিহাস বিষয়কে জনপ্রিয় করা এবং ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং ইতিহাস পাঠে আগ্রহী সকলের মধ্যে সৌহার্দ ও সমঝোতা সৃষ্টি করা; গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা সভা ও সম্মেলনের আয়োজন করা; বিশেষ করে বাংলা ভাষার মাধ্যমে ইতিহাস গবেষণায় উৎসাহ প্রদান  এবং ইতিহাস বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করা। ইতিহাস পাঠ ও গবেষণায় অনুরাগী সকলেই কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সমিতির সভ্য হতে পারেন।         

বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রথমদিকে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১৮ এবং প্রতি বছর সমিতির সাধারণ সভায় কার্যনির্বাহী সদস্যদের ১ বছর মেয়াদে নির্বাচন করা হতো। পরবর্তীকালে এক্ষেত্রে কিছুটা রদবদল করা হয়। বর্তমানে কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য সংখ্যা ৩৯ জন। এছাড়া রয়েছে একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি। কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের মধ্যে যারা বৃহত্তর ঢাকার মধ্যে বসবাস করেন তারাই স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য। জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্ট্যান্ডিং কমিটি সভায় মিলিত হন। মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা আহবান করা হয়। যেহেতু এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সেহেতু এর কর্মকান্ড পরিচালিত হয় সমিতির সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদান ও অর্থ সাহায্য দ্বারা।

বর্তমানে এককালীন ০০০/- টাকা ফি প্রদান করে জীবন সদস্য হওয়া যায়। সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ যুগ্মভাবে সমিতির হিসাব তত্ত্বাবধান ও ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করে থাকেন। সমিতির গঠনতন্ত্রে উল্লেখ নেই এমন সকল ব্যাপারে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাছাড়া গঠনতন্ত্রে রদবদলের প্রস্তাব সমিতির সাধারণ অধিবেশনে উপস্থিত সদস্যদের দুই তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হয়।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি নিয়মিত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠান এবং প্রকাশনার মাধ্যমে ইতিহাস চর্চা ও অনুশীলনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। সমিতির প্রথম জার্নাল প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে Journal of the East Pakistan History Association নামে। ১৯৭৩ সালে এর নাম হয় ইতিহাস সমিতির পত্রিকা। ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় পৃথকভাবে ইতিহাস সমিতি পত্রিকা এবং Bangladesh Historical Studies  নামে প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়া আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহ নিয়ে সহায়ক সিরিজ এবং সমিতির পক্ষ থেকে গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়।

বর্তমানে সমিতির কর্মপরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। আজ আর শুধু দেশে নয়, সমিতির কার্যক্রমে বিদেশের পণ্ডিতবর্গও সংশ্লিষ্ট হচ্ছেন। তাদের অংশগ্রহণে সমিতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মর্যাদা।

বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস চর্চায় বিশ্বাস করে। সমিতির ইতিহাস লিখনের সর্বশেষ আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ঘটনার চূড়ান্ত বাস্তবতা অর্থাৎ সর্বোচ্চ সত্যনিষ্ঠতা উদঘাটনে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর বিস্তারিত গবেষণা, এদেশের জাতীয় আঞ্চলিক ও স্থানীয় ইতিহাস রচনা ও ইতিহাস সচেতনাতা গড়ে তোলার জন্য ইতিহাস সমিতির পক্ষ থেকে অদূর ভবিষ্যতে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।